জনসংখ্যার আধিক্য, ক্রমাগত জমির পরিমাণ কমে যাওয়াসহ জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে নজির সৃষ্টি করে চলেছেন এদেশের পরিশ্রমী কৃষকরা। এরই ধারাবাহিতকায় কৃষি সেক্টরে বিগত ১০ বছরে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। নিবিড় পরিচর্ষার মাধ্যমে আমাদের প্রধানতম খাদ্য ধান,গম, ভূট্টাসহ অন্যান্য মৌসুমীফলও উদ্বৃত্ত উৎপাদন হচ্ছে। দেশে পেয়ারা, সবজি, আম এবং আলুসহ আরো নানারকম মৌসুমী ফলের উৎপাদন বেড়েছে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশী। তেমনি মানুষের আমিষের চাহিদার তুলনায় অনেক বেশী মাছ, মুরগী এবং ছাগল উৎপাদন বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশী হওয়ায় পরিশ্রমী প্রান্তিক কৃষকেরা প্রতিনিয়ত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। ক্রমাগত লোকসানে তাদের ব্যক্তি/পারিবারিক জীবনে নেমে আসছে নিদারুণ হতাশা। এই হতাশাকে আরো ভয়াবহ করে তোলে দেশের জটিল ব্যাংক ব্যবস্থা। ফলে কৃষকের পুঁজি একবার হারিয়ে গেলে সেটা রিকভার করার কোন ব্যবস্থা থাকে না। করোনার প্রথম ধাক্কায় দেড় মাসে পোশাক শিল্পে ৩৮ হাজার কোটি টাকার অর্ডার হারানো কথা জেনেছি আমরা কিন্তু একই সময়ে কৃষিখাতের ক্ষতি হয়েছে (ব্র্যাকের গবেষণামতে) ৫৬ হাজার কোটি টাকা।
এই ক্ষতির বিপরীতে কৃষিজীবীরা কি পেয়েছেন? সুতরাং কৃষিখাত নিয়ে নতুন করে ভাবনার নতুন করে পরিকল্পনার সময় এসেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই আমাদের উৎপাদিত পেয়ারা, সব্জি, আলু, পান এবং আমসহ অন্যান্য কৃষিজাত দ্রব্যের ভাল বাজার রয়েছে। তেমনি মাছ, মাংসসহ অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য রফতানীর করেও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। আর্ন্তজাতিক বাজারে এখনো সুবিধা করতে না পারার দরুণ কৃষিতে জিডিপি’র অবদান নিতান্তই সামান্য। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলো স্বল্প পরিমান আবাদি জমি ব্যবহার করে আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির দ্বারা কৃষি সেক্টরে জিডিপি—তে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাংলাদেশ ৬০%, ভারত ৫৩%, পাকিস্থান ৪০%, থাইল্যান্ড ৩৩% এবং চীন মাত্র ১৩% আবাদি কৃষি জমি ব্যবহার করেও দীঘদিন থেকে ধান উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থান ধরে রেখে জিডিপি—তে অবদান রাখচ্ছে সর্বোচ্চ। অথচ আমরা ৬০% আবাদি কৃষি জমি ব্যবহার করে জিডিপি—তে উল্লেখযোগ্য কোন অবদানই রাখতে পারছি না। ২০১৮—১৯ অর্থবছরে কৃষি/অকৃষি সব দ্রব্য মিলিয়ে রপ্তানী করে ৪০.৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছি। শুধু মাত্র পোশাক খাত থেকে এসেছে ৩৪ মিলিয়ন ডলার অথ্যাৎ জিডিপি’র ৮৪%। কৃষিপণ্যের মধ্যে চিংড়ি, জীবন্ত ও হিমায়িত মাছ, কাঁকড়া, সবজি, তামাক, চা, মসলা, ফুল/ফলসহ অন্যান্য রপ্তানী করে ১.৪০ মিলিয়ন ডলার—৩.৫%। এছাড়া পাট ও পাটজাত দ্রব্যের মাধ্যমে ০.৮২%। চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য হতে ১.০২%। কৃষিজাত দ্রব্য রপ্তানী আয় খুবই কম। বিশ্বের ১০টি দেশ কৃষি ও কৃষিজাত দ্রব্য হতে জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার ৪টি দেশ চীন (৭৩%), ইন্দোনেশিয়া(৩৯%), থাইল্যান্ড(৩৬%) এবং ভারত(৩৫%)। উত্তম কৃষি পদ্ধতি, আধুনিক প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের যে সম্ভাবনা আমাদের সামনে উঁকি দিচ্ছে সেটাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজে লাগানো গেলে দেশের পরিশ্রমী কৃষিজীবিরা সম্মানের সাথে বাঁচেতে পারবেন সাথে জিডিপিতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।