বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ১৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে ৩২ লক্ষ টন পাট উৎপাদন হয়ে থাকে এর মধ্যে আমাদের দেশেই প্রায় ৮.৩৫ লক্ষ মেট্রিকটন অর্থাৎ পৃথিবীর মোট উৎপাদনের প্রায় ২৬% পাট এদেশে উৎপাদন হচ্ছে। সোনালী ফসল পাট ছিল এক সময় এদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। পাট শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে ১৯৫১ সালে নারায়নগঞ্জে গড়ে উঠেছিল পৃথিবীর বৃহত্তর আদমজী জুট মিল। আলাদা পাট মন্ত্রণালয়ও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন জাগে কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে এ শিল্পে? অপার সম্ভাবনাময় এ শিল্পের সাথে এখনো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪ কোটি মানুষ জড়িত রয়েছেন। শুধুমাত্র সঠিক পরিকল্পনা আর যথাযথ মনিটরিং এর অভাবে ধীরে ধীরে বিলীন হবার পথে এসে দাড়িয়েছে শিল্পটা। দেশে বর্তমানে ৩২টি সরকারী ও ২২১টি বেসরকারী পাটকল থাকলেও লোকসানের অজুহাতে ৩০টি সরকারী পাটকলই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রসংগত উল্লেখ করা প্রয়োজন সরকারী ২৬টি সরকারী পাটকলে মোট জমির পরিমানই প্রায় ১.৩১৩ একর। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে দেশে প্রতিদিন কৃষিজমি কমে যাচ্ছে সেখানে মৃত প্রায় সরকারী পাটকলের জমিগুলো বছরের পর বছর ফেলে না রেখে কৃষি কর্মকান্ডের উদ্যোগ নিলেও দেশের বিপুল জনগোষ্টির খাদ্যের চাহিদা পূরণে অবদান রাখা সম্ভব হতো। কেন সরকারী পাটকলগুলোতে টানা লোকসান হচ্ছে সেটা অনুসন্ধান করতঃ কার্যকর কোন পদক্ষেপ কখনো চোখে পড়েছে বলে আমার মনে পড়ে না। কেন লোকসান হচ্ছে এ প্রশ্ন কাকে করবো? কে এর উত্তর দেবেন জানা নেই।একথা সকলেই জানা একপ্রান্তে সরকারী পাটকলগুলো যখন লোকসানের অজুহাতে বন্ধ হচ্ছে অন্যপ্রান্তে বেসরকারী পাটকলগুলো দিনরাত উৎপাদন করেও বাজারের চাহিদা মোতাবক দ্রব্য সরবরাহ করতে পারছে না। উদ্যোক্তাগন আরো নতুন জুটমিল তৈরীর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিশ্বের ৫০টি দেশে পাটজাত দ্রব্য নিয়মিত রপ্তানী হয়ে হচ্ছে। ইউঃ ইউনিয়নের ২৫টি দেশের বাইরেও কোরিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়াসহ আরো ১২০টি দেশে পাটের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তথ্যমতে দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ৭০০ প্রতিষ্ঠান পাটজাত পণ্য তৈরির সাথে যুক্ত রয়েছে। দেশীয় উদ্যোক্তাগন ১৫০ ধরণের পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানীও করছেন। গত ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে এ সেক্টর থেকে তৈরী দ্রব্য রপ্তানী করে যথাক্রমে ৭৯ কোটি ১৩ লক্ষ ও ১১৬ কোটি ডলার আয় করেছে দেশ যা জিডিপিতে খুবই সামান্য অবদান রাখছে। অথচ এ শিল্পটিই একসময় প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচিত হতো।
পরিশেষে সহজ সরলভাবেই বলতে চাই, গতানুগতিক ব্যবহারের ধারণা থেকে বের হয়ে অপার সম্ভাবনাময় শিল্পটির প্রতি যত্ন নেয়া প্রয়োজন। পাটজাত দ্রব্যের মাধ্যমে আরো বেশী মানুষের কর্ম সংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি লক্ষ কোটি ডলার বিদেশ থেকে উপার্জন করা এ এখন আর অলীক কোন স্বপ্ন নয়।
If you enjoyed this article please consider sharing it!
Colorway Wordpress Theme by InkThemes.com