র্বৈশ্বিক পরিবর্তণের যে ঢেউ বিশ্বব্যাপী শুরু হয়েছে সেই পরিবর্তনের তাপ লাগেনি পৃথিবীতে এমন দেশ এমন সমাজ খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুঃস্কর। দেশের ধনী থেকে সাধারণ, উচ্চ থেকে নিন্ম পর্যায় পর্যন্ত পরিবর্তণের ছোঁয়া লেগেছে সর্বত্র। দীর্ঘ দুবছর অদৃশ্য করোনা মহামারী বিরুদ্ধে যুদ্ধে দেশ হারিয়েছে অনেক জ্ঞানী, গুনী, পথিতযশা মানুষকে, তেমননি পরিবার হারিয়েছে তাদের আপনজনকে। শোকাগ্রস্থ, ক্লান্ত, বিষন্ন, পরিশ্রান্ত মানুষ আবার শুরু করতে চাইলো। এগিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয় দীর্ঘদিনের শোক,ক্ষতি—কে শক্তিতে পরিনত করে নতুন করে জীবন সংগ্রামে নামতে না নামতে আকস্মিৎ শুরু হলো মানবসৃষ্ট সমস্যা ক্ষমতাবানদের আধিপত্য বিস্তারের নতুন খেলা। বিশ্ব যখন ৪র্থ শিল্প বিল্পবকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে এমনি সময় ইউক্রন—রাশিয়া যুদ্ধ গোটা বিশ্বব্যবস্থাকে একবারে ওলোট পালট করে দিল। দীর্ঘ ৬মাস ব্যাপি যে যুদ্ধ চলছে শেষ কবে কেউ বলতে পারছে না অথচ বিগত ৬মাসে পৃথিবীর অনেক দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একবারে ভেঙ্গে পড়েছে। মহামারী কোভিডের কারণে পৃথিবী যতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার চেয়ে বহুগুন বেশী হয়েছে ইউক্রন—রাশিয়া যুদ্ধ। আমদানী নির্ভর প্রিয় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব নাজুক হয়ে পড়েছে। কিছু দিন আগেও ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ নিয়ে গর্ব করলেও এখন নেমে এসেছে মাত্র ৩৯বিলিয়ন ডলারে। গর্বিত জাতি হিসেবে ভঙ্গুর অর্থনৈতিক দেশ শ্রীলংকা—কে ঋণ প্রদান করলাম, বিদ্যুত স্বয়ংসম্পন্ন দাবী করে দেশব্যাপি উৎসব করলাম, ১৫/১৬ হাজার মেগাওয়াট বিত্য চাহিদা বিপরীতে ২৫হাজার মেগাওয়ার বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে লক্ষ—কোটি টাকার ব্যয় করছি দীর্ঘ অনেক বছর ধরে টার্গেটঃচাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুত বিদেশে রফতানী, নিজের অর্থায়নে (প্রায়৩৩,০০০কোটি টাকা ব্যয়) তৈরী পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার। সারাদেশে ১০০টা অর্থনৈতিকজোন তৈরীর উদ্যোগ দ্রুত বিকাশমান অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেই মনে করিয়ে দেয়। কৃষি বিল্পবের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতি দেশের ১৭কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশকে পিছনে ফেলে মাথাপিচু আয়ে শীর্ষস্থান আমাদের সফলতার আরেক নাম। দেশ ক্রমাগত এগিয়ে যাবার পথে মরন কামড় যেন বসিয়ে দিয়েছে ইউক্রন—রাশিয়া যুদ্ধ। সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যাবস্থাতে লেগেছে প্রচন্ড ঝাঁকুনি। আমদানী নির্ভর বাংলাদেশও সেই ঝাঁকুনি থেকে রেহাই পায়নি। প্রস্তুতি নেবার পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতে শুরু হয়েছে নানা বিশৃঙ্খলা। রাতারাতি ডলারের দাম বৃদ্ধিতে দেশীয় টাকার মান কমে গেছে, মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে জ্যামিতিকহারে, নাগরিক জীবনে ব্যয় বাড়চ্ছে প্রতিদিন। সরকার ডলার সেইভ করতে আমদানী প্রক্রিয়াতে নানামূখী বাধ্যবাধকতা দেয়ায় বাজারে”র”ম্যাটেরিয়াল সংকট তীব্র হয়েছে। যার প্রভাবে দেশের উৎপাদন শিল্পেও আঘাত হেনেছে। উৎপাদন ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশীয় উৎপাদন শিল্পকে আরো জটিল করে তুলেছে ঘন ঘন বিদ্যুতের লোড শেডিং। উদ্যোক্তাসহ দেশের সকল শ্রেণীর সকল বর্ণের মানুষের জীবন আরো অসহনীয় করে তুলেছে অস্বাভাবিক তেলের মূল্য বৃদ্ধি। বিদ্যুত ও জ্বালানীর মত গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের অস্বাভাবিকতায় মানুষের জীবনে ছন্দ পতন ঘটেছে। বৈশ্বিক উঞ্চতা বৃদ্ধিও অদুর ভবিষ্যতে আমাদের জন্য একটা বড় চ্যলেঞ্জ হয়ে দাড়াবে।
করনীয়ঃ
জীবনে ছন্দ পতন ঘটবে, বাধা বিপত্তি আসবে কিন্তু হাল ছাড়া যাবে না বন্ধু। অজানা স্বপ্নের নৌকায়পাল তোলা হয়েছে তীরে তো পৌঁছতেই হবে। চাকুরী ছেড়ে ব্যবসা বা উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সমাজে সীমাহীন বাধা আর অবহেলা সইতে হয় সত্য তবু আত্নবিশ্বাস হারানো যাবে না। ক্র্যাইসিস সময়ে আত্নবিশ্বাস টিকে থাকার মুলমন্ত্র। বর্তমান সময়ে আত্নবিশ্বাসের সাথে চলতে প্রয়োজন অনেক ধরণের দক্ষতার। নানা ধরণের প্রশিক্ষণ আর অভিজ্ঞতা ম্যাধ্যমে আমাদের দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। ১৮০০শতাব্দীতে শিল্প বিল্পব শুরু পর থেকে কায়িকশ্রম কমে আসছে। কায়িকশ্রমের বদলে যন্ত্রের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে মানুষের। প্রতিটি সেক্টরে আধুনিক ব্যবস্থার সাথে নিজেকে খাপ খাইতে নিয়ে চলতে হবে নইলে মাঝপথেই থেমে যেতে হবে সুতরাং দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই মনে রাখতে হবে ”শিক্ষা যদি হয় জীবন তবে প্রশিক্ষণ হলো জীবিকা”। বিসিকসহ বেশ কিছু সরকারী সংস্থা স্বল্প খরচে নানা ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে যদিও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সারা বছরই এধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ মানুষকে দিনদিন দক্ষ হতে সাহাষ্য করে। দুঃখ হয় একজন উদ্যোক্তাকে এই সমাজে কেউ ফুল দিয়ে বরণ করে না। সেটা পরিবারই বলি বা সমাজ। এদেশের বাবা—মা এখনো স্বপ্ন দেখেন তাদের ছেলে—মেয়ে লেখাপড়া শেষে সরকারী চাকুরী করবে বা বড় কোন কোম্পানী—তে। বেতন যেটাই হোক চাকুরীর সাথেই পরিবারের মান—মর্যাদা জড়িত বলে বিশ্বাস করেন। কিন্তু ভেবে দেখেন না বড় কোম্পানী যারা বানিয়েছেন তারাও এক একজন উদ্যোক্তা। এখনো বড় চেয়ারে বসে থাকা আমলাগন উদীয়মান উদ্যোক্তা—কে সহানুভুতির চোখে না দেখে ভাবেন সমাজের অকর্ম মানুষই হিসেবেই মনে করেন। তাদের চিন্তাতেই আসেনা এই অমীত সম্ভাবনাময় তরুণই হয়তো একদিন দেশের ইতিহাস বদলে দিতে পারে। নিঃসংকোচ চিত্তে বলতে পারি শত প্রতিকুলতার মাঝে এগিয়ে চলা একজন উদ্যোক্তা অন্য যেকোন পেশাজীবির চেয়ে মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী। শত সম্ভাবনার আমাদের এই মাতৃভূমিতে উদীয়মান উদ্যোক্তা সর্ম্পকে মিডিয়াতে যতই ভাল কথা বলা হোক না কেন বাস্তবতা যে ভিন্ন এখানে উপস্থিত সকলে এক বাক্যে স্বীকার করবেন। তাহলে আমরা কি থেমে যাব? না আমরা তো থেমে যাবার জন্য শুরু করিনি বরং মনের গহীনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবরুপ দিতে আরো আপডেট হবো। কারণ প্রকৃতি সব সময় সাহসী মানুষের পাশে থেকে সাহাষ্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। দেশে এখনো প্রায় ৫কোটি মানুষ বেকার। ছোট একটা সফল উদ্যোগ পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে ৪০/৫০জন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। দেশের কৃষি শিল্পের বিস্ময়কর অগ্রগতির পিছনে রয়েছে এমন সফল ছোট ছোট উদ্যোগ। অনেক ছোট সফল উদ্যোগের পরবর্তী বাস্তবরুপই আজকের রপ্তানীমুখি চামড়া, পাট, মাছ, প্লোট্রি, হস্তশিল্পসহ আরো অনেককিছু। ৫০বিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানীর মাইল ফলক পার করেছি গতবছর। এ বছর ৫৮বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আশা করা যায় ৭০বিলিয়ন ডলারে যেতে পারবো। এই জুলাই/২২ মাসেও ৪বিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানী এবং পরিশ্রমী রেমিটেন্স যোদ্ধারা ২বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। সাহসী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের প্রতি রইল সালাম। আমদানী উপর চাপ কমিয়ে রপ্তানী বৃদ্ধির জন্য দক্ষ মানবশক্তির দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে খুব বেশী বেগ পেতে হবেনা কারণ আমাদের মোট জনসংখ্যার ৪১% তরুণ বা যুবক যা মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৬০%।
১৯১১—১২ সালে মাওসেতুং উপলদ্ধি করেছিলেন চীনকে সামনে এগিয়ে যেতে হলে বহুল জনগোষ্টিকে সম্পদে পরিনত করা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে চীন সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় ঘরে ঘরে কুটিরশিল্প গড়ে উঠেছিল। জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিনত করার ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফলস্বরুপই আজকের অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন।পৃথিবীতে এমন অনেক দেশের উদাহরণ দেখতে পাই যারা জনশক্তিকে সম্পদে পরিনত করে বিশ্বে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে নাম লিখিয়েছে। একজন
সাকসেসফুল উদ্যোক্তা টাইম ম্যানেজমেন্ট বা যেকোন পরিস্থিতির সাথে যেমন মানিয়ে নিতে পারেন তেমনি ক্রিয়েটিভিটি বা নিত্যনতুন আইডিয়া সৃষ্টির ক্ষমতাও তার অসাধারণ আর যোগাযোগ দক্ষতা তো থাকাতেই হবে। প্রবাদপুরুষ ওয়ারেন বাফেটকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ১ম জনের আইকিউ অনেক বেশী আর ২য়জনের ধৈষ্যশীলতা ও ডিসিপ্লিন্ডনতা কাকে বেছে নেবেন তিনি ২য়জনকে বেছে নিতে চেয়েছেন। কারণ তীক্ষ্র মেধার চেয়ে লেগে থাকার গুন বেশী দরকার। গবেষণায় দেখা যায় শুধু লেগে থাকার প্রবনতা না থাকার দরুন ২০% উদ্যোক্তা ১ম বার ব্যর্থ হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়।এজন্য সরকারী সহায়তায় নিয়মিত উৎপাদনমুখী প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণ শেষে নানা লজিষ্টিক সহায়তাসহ নিবিড় মনিটরিংএর মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা আত্নবিশ্বাসের সাথে উৎপাদনমুখী কর্মকান্ডে নিয়োজিত হতে পারবেন। দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল। পুজিঁবাদী ব্যাংকিং সিষ্টেমে একজন র্ষ্টাটআপ উদ্যোক্তার জন্য ব্যাংক ঋণ যেন রীতিমত দুঃস্বপ্নের মত। ঋণপ্রাপ্তির জন্য এমন সব যোগ্যতা চাওয়া হয় তা পুরণ সময় সাপেক্ষ। একজন উদ্যোক্তা কর্ম—এর মাধ্যমে ইতিহাসের অংশ হতে পারেন যেটা একজন চাকুরীজীবির পক্ষে কখনো সম্ভব না। আত্নবিশ্বাসে ভরপুর উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাদের সকলের সাথে বলতে চাই আমরা তো শত প্রতিকুলতা মোকাবেলা করেই টিকে আছি ভবিষ্যতেও পারবো আশা করি। মহান আল্লাহ্ রহমতে অচিরেই বিশ্ব তার স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসবে আশা করি। আমরা আরো বড় উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এদেশকে উন্নয়নে শীর্ষে নিয়ে যাব এটাই প্রতাশ্যা।
If you enjoyed this article please consider sharing it!
Colorway Wordpress Theme by InkThemes.com