লেখাপড়ার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন যদি হয় জীবন তবে প্রশিক্ষণ হলো জীবিকা আর দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞতা। জীবনের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা যেমন প্রয়োজন তেমনি আধুনিক মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য লেখাপড়ার বিকল্প নেই। লেখাপড়া শেষে একজন তরুণ যতবেশি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন জীবনের লক্ষ্য ও স্বপ্ন তত সামনে এগিয়ে আসতে থাকবে। পরিপূর্ণ জ্ঞান, প্রশিক্ষণ আর অভিজ্ঞতা একজন তরুণকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহাষ্য করে।
একাডেমিক পরীক্ষায় ভাল করার জন্যই শুধু লেখাপড়ার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত না। জীবন গঠনের জন্য ই পড়ালেখা দরকার। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা—কে ৩৬০ ডিগ্রী তে ঘুড়িয়ে দেয়া দরকার। এখনো আমাদের লেখাপড়ার উদ্দেশ্য যেন ভাল চাকুরীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কোমলমতি শিশুরা মনের আনন্দে যেমন কাটুন দেখতে পছন্দ করে, কম্পিউটারে গেমস খেলতে পছন্দ করে সেই আনন্দে পড়ালেখা করতে চায় না কেন? কোমলমতি শিশুরা লেখাপড়া আর কাটুন বা কম্পিউটারে গেমস যেটাতে আনন্দ পায় সেটা করতেই পছন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক। তারা পড়ালেখার গুরুত্ব বলতে কি বুঝবে? অভিভাবক থেকে সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়গুলো কেন ভেবে দেখেন না? দুঃচিন্তায় অভিভাবকরা রাতের ঘুম নষ্ট না করে লেখাপড়াতে আনন্দের ব্যবস্থা করতে পারলে শিশুরা এমনিতেই লেখাপড়াতে মনোনিবেশ করবে। শিশুরা যখন পড়ালেখাতে আনন্দ খুঁজে পেতে থাকবে তখন সেটা তাদের মধ্যে এমনভাবে রপ্ত হবে যে সেটা আমৃত্য চলতে থাকবে।
বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৭০% ই তরুণ জনগোষ্ঠি। তরুণেরা হলো দেশের সম্পদ। এদের থাকে ভরপুর জীবনি শক্তি। দু চোখ ভরা স্বপ্ন আর কাজের প্রতি তীব্র আকর্ষণ। এরা স্বভাবগত ভাবেই হয় প্রতিবাদী তাই সমাজের সকল বিশৃখংলা থেকে সমাজ কে রক্ষা করার স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে। কিন্তু কিভাবে সেটা তারা জানে না। সমাজ পরিবর্তনের প্রথম পদক্ষেপ হলো নিজেকে ডেভেলপ করা। নিজেকে সমাজের চোখে অনুকরনীয় হিসেবে গড়ে তোলা। আর নিজেকে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন নানা ধরণের প্রশিক্ষণ। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন তরুণ তার জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে পারেন। নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে না তুলেই তরুণেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সাধারণ একাডেমিক সার্টিফিকেট গলায় ঝুলিয়ে চাকুরী বা ব্যবসার বাজারে প্রবেশ করতে চান। অল্প বাধাতেই হতাশ হয়ে ভাগ্য কে দোষারোপ করতে থাকেন। হতাশা আর ভয় মানুষকে দিনে দিনে সংকুচিত করে তোলে। ফলে ঐ সকল হতাশাগ্রস্থ তরুণের দিশেহারা নাবিকের মত জীবনের পথ হারিয়ে ফেলে। এভাবেই নিরবে নিভৃতে এক একটা উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন ঘটে। সমাজে বোঝা বাড়তে থাকে। সুতরাং তরুণদের দেশের সম্পদে পরিনত করতে হলে সাধারণ পড়ালেখার শেষ হবার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকা দরকার। দেশের বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে এ ধরণের কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবেই কত অমিত সম্ভবনাময় তরুণ নিজের যোগ্যতা প্রমানের আগেই হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে সে হিসেব আমরা কয়জন রাখি। মনে রাখা প্রয়োজন আগামি শতক হবে মেশিন নির্ভর। মেশিন নির্ভর সমাজে দক্ষতার বিকল্প থাকবে না। কারণ কায়িক প্রায় সকল কাজই সমাধা করবে মেশিন। শিল্প বিল্পব শুরু পর হতেই মানুষ জনিত কায়িকশ্রম ধীরে ধীরে কমে আসছে। আগামি শতকে আরো অনেক কমে যাবে। এমতবস্থায় একজন তরুণ নিজেকে সমাজের সামনে মেলে ধরতে চাইলে, নিজেকে আকাশের নক্ষত্রের কাছাকাছি নিতে চাইলে জ্ঞান, প্রশিক্ষণ আর দক্ষতার বিকল্প নেই।
If you enjoyed this article please consider sharing it!
Colorway Wordpress Theme by InkThemes.com