Home » Uncategorized » জনসংখ্যার আধিক্য বনাম মানবসম্পদঃ
  • জনসংখ্যার আধিক্য বনাম মানবসম্পদঃ

    জনসংখ্যার আধিক্যের বিষয়ে পেপার, পত্রিকা, সেমিনার, সেম্পুজিয়ামে নানা কথা হয়। আমরা নিজেরাও চায়ের টেবিলে বা আড্ডাতে জনসংখ্যার আধিক্যের জন্য নানাভাবে আতংকিত থাকি। কিন্তু জনসংখ্যার আধিক্য বোঝা না হয়ে আর্শীবাদ হতে পারে সে বিষয়টা ভেবে দেখার প্রয়োজন বোধ করি না। উন্নত রাষ্ট্র তাদের জনগন কে বোঝা মনে করে না বরং দেশের সম্পদ মনে করে থাকে। সেই সম্পদকে ঘিরে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে কাজ শুরু করে। যার দরুণ উন্নত রাষ্ট্রসমুহের জনগোষ্ঠি রাষ্ট্রের জন্য বোঝা না হয়ে সম্পদে পরিনত হয়।
    প্রকৃত উন্নয়ন মানে রাষ্ট্রে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠির মানসিকতার উন্নয়ন। উন্নত মানসিকতার জনগোষ্ঠীই উন্নত সমাজ গড়ে তুলতে পারে। মানসিকতার এ উন্নয়ন ঘটাতে প্রয়োজন সুশিক্ষা, উদ্দেশ্যভিত্তিক শিক্ষা, রুচিশীল সংস্কৃতি এবং উন্নত প্রশিক্ষণ। সুশিক্ষা জনগনের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। আবার শিক্ষা বলতে শুধুমাত্র একাডেমিক লেখাপড়া মানে বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান বা ভালো অংক জানাকেই বোঝায় না। এগুলো ছাড়াও সুশিক্ষা মনের ভিত্তিমুলে ধর্মীয় মূল্যবোধ, অনুসন্ধানী মনোভাব ও সৃষ্টিশীল মানসিকতা, সততা, জাগ্রত বিবেক ও মূল্যেবাধ, দেশপ্রেম এবং ন্যায়নিষ্ঠার মতো মানবিক গুনগুলো জেগে উঠাকে বোঝায়। এ গুনগুলোর সূচক যত উপরের দিকে যাবে জনগন তত সুশিক্ষিত হবে। বস্তুত দেশের উন্নয়ন মানে দেশের মানব সম্পদের উন্নয়ন আর মানব সম্পদের উন্নয়ন হলো আর্থ—সামাজিক উন্নয়ন। মানব—সম্পদকে অনুন্নত রেখে কোন প্রকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। মানব সম্পদের প্রকৃত উন্নয়ন না ঘটিয়ে যদি উন্নয়নের চেষ্টা করা হয় তবে সেখানে অনুপ্রবেশ ঘটবে দূর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, দুঃশাসন ও দূর্ভেদ্য অন্ধকার। এটাকে আপাত দৃষ্টিতে উন্নয়ন মনে হলেও সে উন্নয়ন সাময়িক, ফুঁ দেয়া ফোলানো বেলুনের মতোই হবে। টেকসই উন্নয়ন হবে না। সে জন্য আমাদের সকলের দুরদর্শী লেন্সওয়ালা চশমা পরা দরকার।
    উন্নত দেশ ও সমৃদ্ধ জাতি গড়তে প্রয়োজন পরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থার। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় জনগনের জন্য পরিকল্পিত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে কি? শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার বই থেকে শেখে এক আর বাইরের পরিবেশ থেকে শেখে উল্টোটা। বইয়ের ঘটনার সাথে বাস্তব ঘটনাকে মেলাতে শেখে না। লেখাপড়া মনের গহীনে চিন্তার উদ্রেক ঘটায় না। মনের মধ্যে কোন সৃষ্টিশীলতা জন্মায় না। জীবনের জন্য শিক্ষা নেই, সমাজের জন্য উপযুক্ত মানুষ হবার শিক্ষা নেই, কর্মমূখী শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্য শিক্ষা নেই, নৈতিকতার শিক্ষা নেই অথচ প্রতিদিন দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে শিক্ষার হার বেড়েই চলেছে। কতশত কোমলমতি প্রস্ফুরিত হবার আগেই ঝরে যাচ্ছে। অবুঝ শিশুরা জীবনে উন্নতির অর্থ কি—বা বোঝে? প্রকৃত শিক্ষা আর প্রশিক্ষণের অভাবে কুড়িঁতেই ঝড়ে যাচ্ছে। ফলে এরা অল্প বয়সে বিপথে চলে যাচ্ছে। এভাবেই প্রতিদিন দেশ—সমাজ পিছিয়ে যাচ্ছে, জনগোষ্ঠি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই, উচ্চবাক্যও নেই। একসময় যখন নিজের অক্ষমতার কথা বোঝে তখন আর ফেরার পথ থাকে না। জোড়াতালি দিয়ে শিক্ষার উন্নয়ন যে অতিরঞ্জিত সচেতন জনগন জানে। আমরা লেখাপড়ার উদ্দেশ্যকে জীবন পরিচালনা জন্য শিক্ষা না ভেবে চাকুরী পাবার সংর্কীণ মানসিকতাতেই রয়ে গেছি। শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার সাথে প্রয়োজনীয় স্কীল না শিখে শুধুমাত্র সাধারণ লেখাপড়া শিখে চাকুরীর বাজারে ভীড় করছে যার দরুণ বেকারত্ব দিন দিন বাড়চ্ছে। প্রকৃত শিক্ষা আর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করা গেলে শুধু অবকাঠমোগত উন্নয়ন দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। অল্প সময়ের মধ্যে তা মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *